প্রতিনিধি, পাটগ্রাম ইনফো :
লালমনিরহাট : কালীপুজা উপলক্ষে উভয় বাংলার মানুষের দেখা সাক্ষাতের জন্য লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কাটাতারের বেড়ার ৮টি গেইট বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খুলে দেয়া হয়েছিল। এ সময় দুই বাংলার শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু সেসব গেইটে পরস্পরের সাথে কুশল বিনিময় করে।
দর্শনার্থীরা জানান, প্রথমদিকে বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশিদের কাছে কালীপূজার প্রসাদ বিতরণ করেছেন। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সীমান্তে সনাতন হিন্দুর্ধমাবলম্বীদের আত্মীয়-স্বজনরাও একে অপরের সঙ্গে দেখা করার জন্য দলে দলে গেইটে আসেন।
ভারতীয় কুচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা মহকুমার ধাপরা সীমান্তের ভারতীয় কাটাতারের বেড়ার ৮নং গেইটে কথা হয় বাংলাদেশি কলেজ পড়–য়া দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সম্পা রাণীর (১৮) সঙ্গে। তিনি জানান, গত ফাল্গুন মাসে ভারতীয় ধাপরা নিবাসী ডা. কৃষ্ণ রায়ের সঙ্গে তার জ্যাঠাতো বোন গীতা রানীর বিয়ে হয়েছে। তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য কাকীমা ও ছোট ভাইদের সঙ্গে সেও এসেছে। তাদের সাথে দেখা ও কথা হয়ে সে তার ভাল লাগার অনুভূতির কথা জানান। তিনি আরো বলেন, এই সুযোগ যদি প্রতিবছর দেওয়া হতো তাহলে খুবই ভালো হবে।
ভারতীয় ধাপরা সীমান্তের বাসিন্দা অনিল চন্দ্র রায়, জীতেন চন্দ্র রায়, দিপালী ঘোষ ও পিংকী রাণী সাহা বলেন, আগে যখন সীমান্তে কাটাতার ছিল না। তখন যখনই ইচ্ছে হতো ওপারে আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করতে পারতাম। তারাও দেখা করতে পারতেন। কিন্তু সীমান্তে তারকাটার বেড়া নির্মাণ করার কারণে আমরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তারা আরো জানান, এভাবে প্রতিবছর পুজা ও ঈদের সময় গেইট খুলে দিলে আমরা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও কুশলাদি বিনিময় করার সুযোগ পেতাম।
গেইটের দায়িত্বে থাকা ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সদস্য ভীরেন্দ সিং (সাংবাদিকতার পরিচয় গোপন রেখেছিলাম) বলেন, এপার আর ওপার বাংলায় তো ভেদাভেদ নেই। আমরা একে অপরের প্রতিবেশী। সরকার চাইলে সব পারে, তাই সরকার হুকুম দিলে সীমান্ত খুলে যাবে।
বাংলাদেশী আলাউদ্দিন নগর ও ভারতীয় ধাপরা সীমান্তে প্রায় ২ ঘণ্টা অবস্থানকালে দেখা যায়, দুই বাংলার মানুষের ভালবাসার সেতুবন্ধন। আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন পর নিকটাত্মীয়দের কাছে পেয়ে আনন্দ-আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেন। অনেকেই এখানে এসেছেন দুই বাংলার চিরচেনা বন্ধু এবং পরিচিতদের সাথে কুশল বিনিময়ের জন্য। আগত দর্শনার্থীদের ছবি তোলার একপর্যায়ে বিএসএফ সদস্য ভীরেন্দ্র সিং স্বেচ্ছায় ক্যামেরায় বন্দী হওয়ার জন্য এগিয়ে আসলেন। ছবি তুলে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তিনিও। তবে সন্ধ্যায় গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে রংপুর ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল ওমর সাদী বলেন, আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ভাল। তারই নিদর্শন স্বরুপ সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ কালিপূজা উপলক্ষ্যে কাটাতারের বেড়ার গেইট খুলে দিয়েছে। এর ফলে উভয় দেশের শত শত বাঙালী একে অপরের সঙ্গে উৎসব মুখর পরিবেশের কুশল বিনিময় করেছেন।