
ঘটনাটি এমন সরল হলেও হতো। তা নয়। দোকানে যাওয়ার পর নার্গিসকে মোবাইলে কথা বলতে দেয়ার আগে ইঙ্গিতপূর্ণ বিভিন্ন কথা বলে সময় ক্ষেপণ করে বাবুল। মনে মনে রাগ বা বিরক্ত হলেও বাবার নির্দেশিত ঐ দোকানের মোবাইল থেকে কথা বলতে হবে বলে সে সব মেনে নেয়।
বছর খানেক আগে নার্গিসের এমন এক প্রতারক ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছিল যার ঘটিবাটি চালচুলো কিছুই নেই। ছেলেটা খেতে দিতে পারত না, শারীরিকভাবে অত্যাচার করত। সেই বিয়ে টিকেছিল প্রায় বছরখানেক। মেয়ের কষ্ট বাবার সহ্য হয়নি তাই, সে মেয়েকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে সেই স্বামীর কাছ থেকে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। এখন সে বাবার বাড়িতে। এখানে কথা প্রসঙ্গে বাবুল প্রাক্তন স্বামীর কথা তুলে বলে, দুলাভাই তোর খবর নেয়না, একা থাকিস কিভাবে কিংবা দুলাভাই’র সাথে আরো সংসার করবি নাকি? এরকম আরো বিভিন্ন কথা। যার মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে ছিল যৌনতার অশালীন ইংগিত। প্রতিবেশী বাবুলকে সে চাচা হিসেবে সম্বোধন করে। তাই বাবুলকে সতর্ক করে দেয় চাচা-ভাতিজীর সর্ম্পক এরকম হওয়া উচিৎ নয়। ইতোমধ্যে দোকানে আরো দু’একজন গ্রাহক আসালে বাবুল কৌশলে কথা আর বেশীদূর গড়াতে না দিয়ে নার্গিসকে তখনকার মতো কোনভাবে বিদায় করে।
বাবুল ভেবেছিল চাচা বলে ডাকলেও তরুণী নার্গিসের সাথে সম্পর্কটা মনে হয় অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়া যাবে। তাই সে মোবাইলে কল ব্যাকের জন্য যে দশ টাকা নিয়ে রেখেছিল সেটা ফেরৎ দেয়ার নামে নার্গিসকে আবার আমিনুর নামে প্রতিবেশী একজনের মাধ্যমে খবর দিয়ে দুপুরের পর আসতে বলে। বিকালের দিকে অভাবী সংসারের নার্গিস টাকাটা ফেরৎ আনতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। দোকানে যেয়ে নার্গিস দেখে দোকান মালিক বাবুল তার ছেলে আলালকে দোকানে বসিয়ে রেখে বাড়ি গেছে। তবে ছেলে জানায় কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বাবা ফিরবে। নার্গিসের অপেক্ষার এক পর্যায়ে বাবুল এসেও যায়। নার্গিস তার টাকা চাইতেই বাবুল আবারও ইয়ার্কির ছলে বলে কিসের টাকা। দুপুরের আগে ইয়ার্কিটা এমন ছিল যে সহ্য হয়নি নার্গিসের। এবার নার্গিস ছেলের সামনে কড়া দু’চার কথা শুনিয়ে দেয়। এমন দু’এক কথাতেই বাবুলের ছেলে আলাল (২০) দোকান থেকে নেমে রাস্তার পাশে জ্বালানী হিসেবে বিক্রির জন্য রাখা গাছের ডাল নিয়ে প্রচণ্ড আক্রোশে ঝাপিয়ে পড়ে নির্দোষ নার্গিসের উপর। নির্মম পিটুনী দেয় সে। এতে নার্গিসের শরীরের কোথাও চামড়া খুলে যায় আবার কোথাও পড়ে কালশীটে দাগ। এঘটনা দেখে নার্গিসের খালা আমিনা তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে তাকেও পিটুনী দেয় আলাল।
আহত অপমানিত নার্গিসের জন্য সমাজের এর-ওর কাছে সুবিচারের জন্য গিয়েছিল বাবা আব্দুল গফুর। কিন্তু মেয়ের সুবিচার তার কাছে অধরাই থেকে গেছে। ঘটনাটি গত ২৫ অক্টোবরের জেলার পাটগ্রাম উপজেলার মির্জারকোট গ্রামের। এই প্রতিবেদক দুপক্ষের কাছ থেকেই ঘটনা শুনে সামাজিকভাবে এর সুরাহার জন্য বাবুলের উপর চাপ প্রয়োগ করে। যাতে অনেকের সামনে দিনদুপুরে লাঞ্চিত অপমানিত নার্গিস কিছুটা হলেও শান্তনা পায় এই মনে করে যে, সমাজে এখনো সুবিচার হয়। কিন্তু অন্যায় এই কৃতকর্মটির জন্য বাবুল ও তার ছেলে আলাল যখন সুষ্ঠু সমাধান চাইল না তখন দিনদুপুরে অনেকের সামনে সম্মান হারানো নার্গিসের বাবা তার আদরের মেয়েকে নিয়ে আর কোথায় যাবে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
####### -আমাদের সাইট এ মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ- #######